বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন
EN

বরিশালে বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভূমিহীন-গৃহহীন দের গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এর আবেগঘন প্রতিক্রিয়া।

রিপোর্টারের নাম / ৯৭ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আশ্রায়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় “আশ্রয়নের অধিকার-শেখ হাসিনার উপহার” এই স্লোগান নিয়ে সারা দেশে দরিদ্র অসহায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ৯ লক্ষ ভূমিহীন ও গৃহহীন দের মাঝে জমি ও গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তারি ধারাবাহিকতায় সারা বাংলাদেশে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫৬৭ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে “বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না” মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান কাযক্রম চলমান রয়েছে। তারি ধারাবাহিকতায় আজ ১৩ জুলাই মঙ্গলবার বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার গৃহনির্মাণ কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরিশাল সোহেল মারুফ। পরিদর্শন শেষে নিজ ফেইসবুক আইডিতে মনমুগ্ধকর এক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন যা হুবুহু তুলে ধরা হলো।

#হাজেরা খাতুন ও ইন্দুবালার অমলিন হাসি আশ্রয়ণ পরিদর্শন।

পরিষ্কার রৌদ্রময় আকাশের মাঝেই যখন গাড়ি থেকে নেমে ট্রলারে উঠলাম, হঠাৎ বৃষ্টি। আমিসহ সবাই ভিজে যাচ্ছি। মালামালবাহি এ ট্রলারে ছাতা নেই। আবার বন্ধ হয়ে গেল ট্রলারের ইঞ্জিন। তেল নেই। আমি বিব্রত। বিব্রত ইউএনও, এসিল্যান্ড। সাথে আছেন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। একজন বললেন, ধান,নদী খাল,এই তিনে বরিশাল, আপনি এমন অবস্থায় না পড়লে আমাদের বুঝতেন না। খালের পাড়ে ৮ টি ঘর। জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছেন? ভালো আছি। ছেলে ২ টা। ক্লাশ ৯ এ পড়ে বড়টা।বললেন, এভাবে ডেকে এনে কেউ জায়গাসহ ঘর দিবে তারা ভাবতে পারেনি কিছুদিন আগেও। বললাম, ঘর কে দিল? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর করে দিয়েছে ইউএনও আপা। বললাম দোয়া করবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর জন্য। সবসময় করি, তাদের উত্তর।

আরেকটি স্পটে গেলাম। ৪ টি ঘর। বাজারের সাথে। ইউএনও জানাল, জায়গার দাম প্রায় ৪ লক্ষ টাকা শতাংশ। ৪ টি পরিবার ইউনিয়ন পরিষদে ত্রিপল টানিয়া বাস করত। আশ্রয়ণে তাদের স্থায়ী ঠিকানা দেয়ার পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের চত্ত্বর সুন্দর হয়েছে। ইউএনও, এসিল্যান্ডকে দামি জায়গা বলে উদ্ধারে অসম লড়াই করতে হয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে। সে গল্প কেউ শুনতে চায় না।

লেবুখালী ক্যান্টনমেন্টের পিছনে আরেকটি আশ্রয়ণে গেলাম।ইউএনওকে দেখে হাজেরা বেগমের আকর্ণ হাসি থামতেই চায় না।ইউএনও যেন তার বোন। বললাম, চাচা কি করেন? বাবা, তোমার চাচা নাই, ভেসে বেড়াচ্ছিলাম এই বুড়া বয়সে ইউএনও আপা ডেকে শেখ হাসিনার ঘরে তুলে দিছে! পাশের বাড়ি থেকে এগিয়ে এল বিধবা ইন্দুবালা। বলল, তার মায়ের নামে ঘর বরাদ্দ। বললাম, আপনি বয়স্ক মানুষ। আপনার মায়ের বয়স কত? জানলাম, ১০০ পার। ৯ টি ঘর। একবাড়ির বারান্দায় নামাজ পড়ছে একজন।অন্যপাশের বাড়ি থেকে পূজা দিয়ে বের হলো আরেকজন নারী।
ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান জানালেন, ৯ টি পরিবারের ৫ টি মুসলমান ও ৪ টি হিন্দু পরিবার। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
ইন্দুবালাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছেন? প্রায় কেঁদে ফেলল, সে।বলল, ভাবিনি এমন স্বপ্নের কথা। নিজের বাড়ি ঘর হবে, হবে নিজের নামে দলিল। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বার জানালেন, প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা বাজারমূল্যের এ খাসজমি উদ্ধারে কি বেগ পেতে হয়েছে ইউএনও আর এসিল্যান্ডকে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নলকূপ বসাচ্ছে। বললাম, কত ফুট? ৯৯০…এত কেন? স্যার, এ এলাকায় ভালো পানি পেতে প্রায় ১২০০ ফুট খনন করতে হয়!

হাজেরা খাতুন আর ইন্দুবালা স্বজনের মতো ইউএনও’র পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আপা, আবার কবে আসবেন? আপনি আসলে খুব ভালো লাগে। হাসতে হাসতে বললাম, ইউএনও চলে গেলে কষ্ট হবে?
সবাই একসাথে এসে জবাব দিল, কেন স্যার,,আপা যাবে কেন? উনি গেলে আমাদের দেখতে আসবে কে?
বললাম, চেয়ারম্যান সাহেব আছেন, আছেন মেম্বার সাহেব।
ভালো থাকবেন বলে বিদায় নিলাম। বিদায় নিলাম সম্মানিত ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে।
আসার সময় বারবার মনে পড়ছিল হাজেরা বেগম আর ইন্দুবালার হাসিমুখ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলেই আজ এদের ঘর হয়েছে, হয়েছে ২ শতাংশ জমির মালিকানা। তারাও গর্বভরে বলতে পারে, আমাদের ঠিকানা আছে। আমরা আর নই-ভূমিহীন-গৃহহীন।
আরেকটু সামনে এসে বিদায় নিলাম, বাকেরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাধবী রায় ও এসিল্যান্ড তরিকুলের কাছ থেকে। অত্যন্ত মেধাবী আর দৃঢ়চেতা দুই অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলী আর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে এই স্বপ্নের প্রকল্পের নেপথ্য কারিগর-অনুজ সহকর্মীদের উদ্যোম, চেষ্টা আর অর্জন গর্বিত হওয়ার মতো।

স্বপ্ন এগিয়ে যাক, ভালো থাকুক হাজেরা খাতুন আর ইন্দুবালারা…..


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:

বরিশাল-৮২০০।

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:

নিউজ রুম মোবাইল:: 0088-01719-390602, 0088-01818-323306

editor@chandradvip24.com(সম্পাদক)
editor@chandradvip24.com(নিউজ)
editor@chandradvip24.com(নিউজ)
২০২২ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত chandradvip24.com